ওয়াইফাই ইন্টারনেট সিগন্যালের এই ক্ষতিকর দিকগুলো অনেকেরই অজানা

ওয়াইফাই ইন্টারনেট যেনো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণ ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে কম্পিউটার, ফোন, ট্যাবলেটসহ অন্যান্য ডিভাইসগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। বর্তমানে, ওয়াইফাই ছাড়া প্রায় কোনও বাড়ি বা অফিস কল্পনা করা যায় না। শহর বা গ্রাম, মল বা রেস্তোরাঁ, বিমানবন্দর বা রেলস্টেশন, সবখানেই ওয়াইফাই পাওয়া চাই ই চাই। এমনকি, অনেক ক্যাবও বর্তমানে ওয়াই-ফাই সুবিধা প্রদান করছে।
তবে, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন না যে, এই ওয়াইফাই সংকেতগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। গবেষকদের মতে, ওয়াইফাই ডিভাইসের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণ শরীরে প্রবাহিত হলে এটি সুস্থ কোষের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, ভ্রূণের বিকাশের ওপর এর প্রভাব হতে পারে মারাত্মক।
২০০৪ সালে ইঁদুরের ওপর করা একটি গবেষণায় এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আরএফ বিকিরণের কারণে ইঁদুরের কিডনি সঠিকভাবে বিকশিত হয়নি। একইভাবে, মোবাইল ফোন এবং তার সঙ্গে যুক্ত ওয়াইফাই ব্যবহারে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে, যা মস্তিষ্কের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণাগুলোতে প্রমাণিত হয়েছে যে, ওয়াইফাই সংকেতগুলোর দীর্ঘসময় গ্রহণ মানুষের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ওয়াইফাই রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি শুক্রাণুর গতিশীলতা হ্রাস করতে পারে এবং ডিএনএ মিউটেশন ঘটাতে পারে। এই গবেষণায় শুক্রাণুর নমুনাগুলোকে একটি ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সংযুক্ত ল্যাপটপে ৪ ঘণ্টা রাখার পর দেখা যায় যে, শুক্রাণুর গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে এবং তাদের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা (আইএআরসি) আরএফ বিকিরণকে একটি সম্ভাব্য মানব ক্যান্সার সৃষ্টিকারী (গ্রুপ ২বি) হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং এনভায়রনমেন্টাল হেলথ ট্রাস্টের গবেষকদের মতে, শিশুদের শরীর অতিরিক্ত মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ শোষণ করে, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। শিশুদের মস্তিষ্কের টিস্যুতে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে এই বিকিরণ, যার ফলে তাদের মাথার খুলি ছোট এবং পাতলা হয়ে যায়।
এমডব্লিউআর বিকিরণ বিশেষ করে ভ্রূণের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। গবেষকদের মতে, গর্ভধারণের সময় মা যদি অতিরিক্ত মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ গ্রহণ করেন, তবে তার প্রভাব ভ্রূণের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ওয়াই-ফাই রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (আরএফ) বিকিরণ মা এবং তার গর্ভস্থ সন্তানের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
এছাড়া, এটি শিশুদের জন্য শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে, যেমন তাদের শরীরের কোষের বিকাশে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের মস্তিষ্কের টিস্যুতে এই বিকিরণের প্রভাব পড়লে, তাদের মস্তিষ্কের গঠন এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অতএব, আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ওয়াইফাই এবং মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার অত্যধিক হলে তা আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি আরও বেশি বিপজ্জনক হতে পারে। এমনকি, যাদের স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ আছে, তাদের জন্যও অতিরিক্ত আরএফ বিকিরণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
পরিশেষে, প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দিয়েছে, তবে এর পাশাপাশি এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও সতর্ক থাকতে হবে। যদি আপনি দীর্ঘক্ষণ ওয়াইফাই ব্যবহার করেন, তবে কিছু নিয়মাবলী মেনে চলুন, যেমন ওয়াই-ফাই ডিভাইসগুলোর কাছ থেকে কিছুটা দূরে থাকুন এবং যখন ব্যবহার না করছেন, তখন ডিভাইসটি বন্ধ রাখুন। এছাড়া, শিশুদের কাছে এই ধরনের ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের।
সম্পর্কিত সংবাদ

এপ্রিল মাসে বাজারে আসছে এসব মডেলের স্মার্টফোন
চলতি এপ্রিল মাসে একগুচ্ছ নতুন স্মার্টফোন লঞ্চ হতে চলেছে। একই কোম্পানি লঞ্চ করছে একের বেশিবিস্তারিত…

শাওমি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির স্মার্টফোন আনছে
চীনের প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শাওমি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির স্মার্টফোন নিয়ে শিগগিরই বাজারে হাজির হচ্ছে। যার মডেলবিস্তারিত…