নেত্রকোণা শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি

প্রয়োজনে এখানে মারা যাবো, তবুও ক্যাম্পাস ছাড়বো না

শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. পি. এম. শফিকুল ইসলাম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এনামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রয়োজনে মারা যাবেন, তবুও ক্যাম্পাস ছাড়বেন না।

সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুর বারোটা থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

তারা বলছেন, তাদের ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য স্ব-ইচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু ট্রেজারার অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এনামুল হক কোনও ভাবেই পদত্যাগ করতে রাজি নন। তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ১১ দফার ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম এর মধ্যে দাবিগুলোর নিশ্চয়তা দিতে না পারায়, আমাদের ভাইস চ্যান্সেলর নিজ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু স্বৈরাচার ট্রেজারার এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা এনামুল হক আরাফাত আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে প্রশাসন যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু তারা কোনোভাবেই পদত্যাগ করতে চান না। কিন্তু আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছি, যতদিন পর্যন্ত ট্রেজারার ও জনসংস্থ সংযোগ কর্মকর্তা পদত্যাগ না করবে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সফল হয়েছে। এখন সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ চলছে। এই সংস্কারমূলক কাজের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার হাত ধরে যারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়ে স্বৈরশাসন কায়েম করেছে তাদের পদত্যাগ চাচ্ছি। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ট্রেজারার শফিকুল ইসলাম।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রশাসনের কাছে আমাদের এটাই চাওয়া, দুর্নীতিবাজ স্বৈরাচারে তাবেদাররা থাকতে পারবে না। জনসংযোগ কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে আমাদের বোনদের লাঞ্ছিত করেছে। আমরা তাদের পদত্যাগ চাই। আমাদের দাবি যতক্ষণ আদায় না হবে, আমরা ততক্ষণ আমাদের এই অবস্থান ছাড়বো না। প্রয়োজনে এখানে মারা যাবো, তবুও ক্যাম্পাস ছাড়বো না।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-

১. শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয় করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

২. ক্যাম্পাসে দলভিত্তিক ছাত্র শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং ছাত্র সংসদ গঠন করার লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

৩. হলের সিট বর্ধন, অবৈধ আবাসিকদের বিতাড়িত, হল পরিচালনা নীতিমালা শতভাগ অনুসরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলের নাম কমরেড মণি সিংহ হল বা বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ হল এবং মেয়েদের হল কুমুদিনী হাজং হল নামকরণ করতে হবে। পাশাপাশি হলে ডাইনিং ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে।

৪. বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যেসব কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে অপমান এবং হেনস্তামূলক কথাবার্তা বলেছে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে, হত্যার স্বপক্ষে মিছিল করে হুমকি দিয়েছে এবং প্রকাশ্যে অস্ত্র ও লাঠি ধারণ করে নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, অনতিবিলম্বে তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এদের মদদদাতা যারা ছিল তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।

৫. সকল প্রকার বাজেট প্রস্তাবনা প্রকল্প ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে দুর্নীতির সাথে সম্পর্কিত প্রমাণ পাওয়া গেলে শিক্ষক ছাত্র ও কর্মকর্তা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসের স্থানান্তরিত করতে হবে এবং ক্যান্টিন সুবিধা দিতে হবে এক বছরের মধ্যে দুটি হল একাডেমিক ভবন এবং লাইব্রেরী ভবন নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।

৭. শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় সহকারী প্রক্টরকে এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত পালন করায় দুটি হলের সহকারী প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের পদত্যাগ করতে হবে।

৮. ডিপার্টমেন্টগুলো থেকে প্রেরিত চাহিদাপত্র অনুযায়ী চার মাস সময়ের মতো শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করে অনলাইন ক্লাসসমূহ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।

৯. প্রাক্তন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার মুখের কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ একর জমি মেডিকেল কলেজকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইঞ্চি জায়গা ও জমি কোথাও দেওয়া যাবে না বিবৃতির মাধ্যমে এই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এক সপ্তাহের মধ্যে স্পষ্ট করতে হবে

১০. বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে অনতিবিলম্বে নিম্নোক্ত সুবিধা সমূহ ক্লাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে। যেমন, পরিবহন চলাচলের সিডিউল বৃদ্ধি করতে হবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সকল রোডে বাস চলাচল নির্দিষ্ট সময় সূচির মতো নিশ্চিত করতে হবে।

১১. বিভিন্ন বর্ষে ভর্তি ফি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অস্থায়ী হল শহরের মধ্যে আনা, মেধা বৃদ্ধির পরিমাণ বৃদ্ধি, পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ, ব্যক্তিগত বা অন্য কোনো কারণে শিক্ষার্থীদের ভাইবা বা কোথাও হয়রানি করা যাবে না, পর্দা বা যে কোনো ধর্মীয় মতাদর্শের প্রতি সম্পূর্ণ সহানুভূতি রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ কর্তৃক সকল ধরনের ক্লাব একটিভিটিস দ্রুততম সময় চালু এবং সক্রিয় রাখার যত উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, এক মাসের মধ্যে অস্থায়ী হলগুলোতে ডাইনিং চালু এবং নতুন আইডি কার্ড ও রিডিং রুম চালু করতে হবে ও শিক্ষার্থীদের মেডিকেল সুবিধা দিতে হবে।

নিউজটি ফেসবুকে শেয়ার করুন ...
fb-share-icon





সম্পর্কিত সংবাদ

  • এসএসসির ফল প্রকাশ কতদিনে, জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা
  • ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ জানালো পিএসসি
  • ঢাবি থেকে ছাত্রলীগের সাদ্দাম ও ইনান বহিষ্কার
  • জুলাই আন্দোলনে হামলায় জড়িত ঢাবির ১২৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
  • শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি মেনে নিল সরকার, আন্দোলন প্রত্যাহার
  • ধর্ষণের প্রতিবাদে যবিপ্রবিতে মানববন্ধন
  • সব ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত
  • ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার নির্দেশ
  • Copy link
    URL has been copied successfully!