হেদায়াত পেয়েও মানুষ পথভ্রষ্ট হয় যেভাবে

হেদায়াত আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। এই নেয়ামত পাওয়ার পরি হারিয়ে ফেলা বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। প্রিয়নবী (স.) উম্মতের পথভ্রষ্ট হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেন। মুমিন বান্দা তখনই পথভ্রষ্টতার দিকে চলে যায়, যখন সে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়। মানুষের ঈমানকে কলুষিত করে দিতে পারে ঝগড়া-বিবাদ।
হজরত আবু উমামাহ (সাদি বিন আজলান) (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমার পরে হেদায়াতপ্রাপ্ত লোক তখনই পথভ্রষ্ট হবে, যখন তারা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হবে। অতঃপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন ‘বরং এরা তো এক বিতর্ককারী সম্প্রদায়’ (সুরা যুখরুফ: ৫৮)। (ইবনে মাজাহ: ৪৮)
বুঝা গেল- হেদায়াতপ্রাপ্ত লোকেরা তথা মুমিন বান্দা কখনও ঝগড়ায় লিপ্ত হতে পারে না। এমনকি যৌক্তিক বিষয়েও ইসলাম ঝগড়া এড়িয়ে চলতে উৎসাহিত করে।
এমন মানুষদের জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়ে নবীজি (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার। (আবু দাউদ: ৪৮০০)
অহেতুক ঝগড়া-বিবাদ বাজে অভ্যাস। এর কারণে ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়; বহু কল্যাণ থেকেও বঞ্চিত হতে হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) ঝগড়াকে মুনাফিকের অভ্যাস বলে আখ্যা দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, চারটি (দোষ) যার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে সে খাঁটি মুনাফিক; একটি বিদ্যমান থাকলে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকির একটি স্বভাব থেকে যায়। (দোষগুলো হলো) ১. যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. সে সন্ধি চুক্তি করলে তা ভঙ্গ করে, ৩. সে ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং ৪. সে ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে। (মুসলিম: ১১৩)
এখানে অশ্লীল ভাষা ব্যবহারকে মুনাফিকের চরিত্র বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আর অশ্লীল ভাষা ছাড়া তো ঝগড়াই জমে না। তখন মানুষকে শয়তান প্রভাবিত করে আর তারা বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে অশ্লীল কথা বা কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। এভাবে দুই মুসলমানের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে শয়তান খুশি হয়। হাদিসে এসেছে, স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটানো শয়তানের জন্য সবচেয়ে আনন্দের খবর। এতে শয়তানের প্রধান খুশি হয়ে তার অনুগত শয়তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে। (মুসলিম: ৭২৮৪; আহমদ: ১৪৩৭৭)
অতএব, মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো- ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকা। এ জন্য বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব ত্যাগ করা চাই। এই গুণ অর্জনে নবীজি বলেছেন, তোমরা অনুমান থেকে বেঁচে চলো। কারণ অনুমান বড় মিথ্যা ব্যাপার। আর কারো দোষ খুঁজে বেড়িও না, গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পরকে ধোঁকা দিয়ো না, আর পরস্পরকে হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করো না এবং পরস্পরের বিরুদ্ধাচরণ করো না। বরং সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। (সহিহ বুখারি: ৬০৬৬)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত সংবাদ

ঈমান হারানোর মহামারি নিয়ে যা বলেছেন নবীজি
ঈমান মুসলমানের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ঈমান না থাকলে নেক আমল মূল্যহীন। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ঘোষণাবিস্তারিত…

রাতে ঘুম না এলে যে দোয়া পড়তেন নবীজি
ঘুম আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে ঘুমকে আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবংবিস্তারিত…