দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসে ১৫ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনা সভা ‘স্থগিত’

বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেদিন আততায়ীরা নির্মমভাবে সপরিবার হত্যা করেছিল, সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্মরণে প্রতি বছর ওই তারিখে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাস ও মিশনে ‘জাতীয় শোক দিবস’ পালন করা হয়ে থাকে। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনও এর কোনও ব্যতিক্রম নয়। গত বছর পর্যন্ত সসম্মানে ও যথোচিত মর্যাদায় এই কর্মসূচি সেখানে পালিত হয়ে এসেছে।

তবে এ বছর সেই অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দিল্লির দূতাবাসে যে বিশেষ আলোচনা সভা হওয়ার কথা ছিল, সেটি প্রায় শেষ মুহূর্তে বাতিল করতে হয়েছে। দূতাবাস কতৃ‍র্পক্ষ অবশ্য ঠিক বাতিল নয়, ‘স্থগিত’ কথাটি ব্যবহার করছে। তারা বাংলা ট্রিবিউনকে আরও জানিয়েছে, জাতীয় শোক দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি তারা পালন করবেন কি না সে ব্যাপারে ঢাকা থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের অপেক্ষা করা হচ্ছে।

চলতি বছরেও জাতীয় শোক দিবস পালনের অংশ হিসেবে এই আলোচনা সভার আয়োজন সম্পন্ন হয়ে যায় অনেক আগেই। গত ২ অগাস্ট (শুক্রবার) বর্তমান হাইকমিশনার মহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমানের পক্ষে তার কার্যালয় থেকে দিল্লিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাবেক কূটনীতিবিদ ও সেনা কর্মকর্তা, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও অন্যান্য অতিথিদের এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণপত্রও পাঠানো হয়ে গিয়েছিল।

ওই চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু: বিশ্ব শান্তি ও মানবতার এক মূর্ত প্রতীক’– এই বিষয়ে দূতাবাসে সে দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় একটি বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে যোগ দিতে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।


এ বছরের অনুষ্ঠানের (এখন বাতিল) একটি আমন্ত্রণপত্রের প্রতিলিপি
এই চিঠি পাঠানোর ঠিক তিন দিনের মাথায় (৫ আগস্ট) নাটকীয় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয় বঙ্গবন্ধুর কন্যা তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, তিনি সে দিনই দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন। এর পর ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালানো হয়, হামলা ও লুটপাট হয়, ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়, আক্রান্ত হন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও।

এর ৩ দিন পর (৮ আগস্ট) ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে।

এদিকে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ঠিক পরদিনই (৬ আগস্ট) দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে অতিথিদের আবারও চিঠি ও ইমেইল পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘অনিবার্য কারণবশত’ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানসূচি ‘স্থগিত’ করে দেওয়া হচ্ছে।

২২
২০২২ সালে দিল্লির দূতাবাসে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান
তবে কাগজে-কলমে অনুষ্ঠান ‘স্থগিত’ করার কথা বলা হলেও অনুষ্ঠানের কোনও নতুন তারিখ জানানো হয়নি। শুধু দিল্লির হাইকমিশনেই নয়, কলকাতাসহ ভারতে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনে আগামী ১৫ আগস্ট যে সব অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা ছিল তার সব প্রস্তুতিই থেমে গেছে বা সেগুলো একরকম বাতিল করে দেওয়া হয়েছে বলেও এই প্রতিবেদক জানতে পেরেছেন।

এদিকে সোমবার রাতে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র এই প্রতিবেদককে জানায়, দূতাবাস কর্তৃপক্ষ আগামী ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করবে কি না, এ ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা ঢাকা থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের অপেক্ষায় আছে, সেটা এলেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তবে বাংলাদেশ হাই কমিশনের কর্মকর্তারা এ কথা স্বীকার করেছেন যে ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় দূতাবাসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে বিশেষ আলোচনা সভা হওয়ার কথা ছিল, উদ্ভূত পরিস্থিতির নিরিখে সেই অনুষ্ঠান এখনকার মতো বাতিল করতে হয়েছে।

তবে এই অনুষ্ঠান বাতিল করার সিদ্ধান্ত যখন অতিথিদের জানানো হয়, তখনও ঢাকায় নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণই করেনি। ফলে এই সিদ্ধান্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিয়েছেন, না কি সেনাবাহিনীর ইশারায় এটা করা হয়েছে, না কি হাই কমিশন নিজে থেকেই পরিস্থিতি বিচার করে অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছে সে বিষয়টি খুব একটা স্পষ্ট নয়।

এর আগে হাইকমিশনের আর একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিল, জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠান বাতিল করাই শুধু নয় – দূতাবাসের বিভিন্ন কক্ষ বা হল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি বা প্রতিকৃতিও না কি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

দূতাবাসের পক্ষ থেকে এই দাবি অবশ্য পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে দূতাবাস প্রাঙ্গণ থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি বা প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে, এই তথ্য ঠিক নয়। হাইকমিশনারের কার্যালয়ে, দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্নারে বা বঙ্গবন্ধু হলে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বা ভাস্কর্য যেমন ছিল, সাংবিধানিক রীতি মেনে তেমনই রাখা আছে বলে তারা দাবি করেছেন।

সোমবার রাতে হাইকমিশনার মহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দূতাবাসে আমার কক্ষেও বঙ্গবন্ধুর ছবি যেমন আগে ছিল এখনও তেমনই আছে, চাইলে আপনারা এসে দেখেও যেতে পারেন!’

তবে জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দূতাবাসের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনাসভা বাতিল হওয়ায় ভারতের রাজধানীতে অনেকেই বেশ হতাশ।

দিল্লিতে ভারতের এক প্রবীণ সাংবাদিক, যিনি বাংলাদেশ বিষয়ক খবরাখবর করছেন প্রায় ৪০ বছর ধরে, তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় শোক দিবসের এই শোকগম্ভীর অনুষ্ঠান প্রতি বছর একটা নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছিল। আমার যত দূর মনে পড়ে, ২০০৬ সালের আগস্টে যখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ঢাকার ক্ষমতায় ছিল তখনই বোধহয় শেষবার এই অনুষ্ঠান হয়নি। তারপর থেকে এই শোক দিবস প্রতি বছরই পালিত হয়ে এসেছে একেবারে নিয়ম করে।’

ফলে এবারের অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ার মধ্য দিয়ে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিগত প্রায় দু’দশকের একটি ঐতিহ্যবাহী পরম্পরায় ছেদ পড়তে যাচ্ছে।

নিউজটি ফেসবুকে শেয়ার করুন ...
fb-share-icon





সম্পর্কিত সংবাদ

  • ভারত : ওয়াক্ফ আইন নিয়ে অন্তর্বর্তী নির্দেশিকার পথে সুপ্রিম কোর্ট
  • নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করল সিঙ্গাপুর
  • গাজায় গণহত্যা: ইসরায়েলিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিলো মালদ্বীপ
  • ইরানে হামলায় ৮ পাকিস্তানি নিহত
  • যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনের বেশি থাকা বিদেশিদের নিবন্ধন করার নির্দেশ
  • সৌদিতে আজ থেকে ওমরাহ করতে যেতে পারবেন না কেউ
  • ভারতে ওয়াকফ বিল নিয়ে উত্তাল মুর্শিদাবাদ, নিহত ৩
  • ট্রাম্প-মাস্কবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকা
  • Copy link
    URL has been copied successfully!