হজের সফরে মক্কা পৌঁছা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া

দোয়া মুমিনের সঙ্গী। আল্লাহ তাআলা বান্দার নেক দোয়া কবুল করতে পছন্দ করেন। হজ পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র সফর শুরু করা থেকে মক্কা মুকাররমায় পৌঁছা পর্যন্ত কিছু দোয়া গুরুত্বপূর্ণ। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো।
১. বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়
হজের সফরের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চেয়ে এই দোয়া পড়ুন- بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ وَ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’ অর্থ: ‘আল্লাহর নামে, আল্লাহর ওপরই নির্ভর করলাম, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার শক্তি কারো নেই।’ এই দোয়া করে ঘর থেকে বের হলে তার জন্য আল্লাহ তাআলাই যথেষ্ট হয়ে যান এবং তার কাছ থেকে শয়তান দূরে সরে যায়। (তিরমিজি: ৩৪২৬)
২. পরিবার পরিজনের জন্য নিরাপত্তার দোয়া
أَسْتَوْدِعُكَ اللهَ الَّذِي لَا تَضِيعُ وَدَائِعُهُ উচ্চারণ: ‘আসতাওদিউকাল্লাহাল্লাজি লা তাদীউ ওয়াদা-ইউহু’ অর্থ: ‘আমি তোমাকে আল্লাহর আমানতে সোপর্দ করলাম, যাঁর নিকট সোপর্দকৃত জিনিস ধ্বংস হয় না।’ (ইবনে মাজাহ: ২৮২৫)
৩. গাড়িতে ও বিমানে উঠার সময়
গাড়িতে বা বিমানে উঠে একবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে এই দোয়া পড়ুন- سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি সাখখারালানা হা-যা ওয়ামা- কুন্না- লাহু মুকরিনিন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুন কালিবুন।’ অর্থ: ‘তিনি পূতপবিত্র ওই সত্তা যিনি বাহনকে আমার অধীন করে দিয়েছেন। আমাদের কাছে তাকে আয়ত্তে আনার ক্ষমতা ছিল না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।’ এরপর তিনবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলে এই দোয়াটি পড়ুন- سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ، فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلا أَنْتَ উচ্চারণ: ‘সুবহানাকা ইন্নী জলামতু নাফসী ফাগফির লী ফায়িন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনূবা ইল্লা আনতা।’ অর্থ: ‘আল্লাহ পবিত্র! নিশ্চয় আমি আমার নিজের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই।’ (শামায়েলে তিরমিজি: ১৭৩)
৪. ইহরামের পোশাক পরিধানের সময়
গোসল করে ইহরামের পোশাক পরার সময় (একটু আগে পরে পড়লেও সমস্যা নেই) এই দোয়া করা যায়—اَللَّهُمَّ اِنِّي اُرِيْدُ (العُمْرَةَ – الْحَجَّ) فَيَسِّرْهُ لِيْ وَ تَقَبَّلْهُ مِنِّي উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল উমরাতা/হাজ্জা ফাইয়াসসিরহু লি ওয়া তাকাব্বালহু মিন্নি’ অর্থ : হে আল্লাহ! আমি (ওমরা/হজের) ইচ্ছা করছি; আপনি আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন।’
৫. ইহরামের পোশাক পরিধানের পর
ইহরামের পর তালবিয়া পাঠ করা জরুরি। এরপর থেকে হজের সবগুলো রোকন আদায়ের সময় তালবিয়া পাঠ করা সুন্নত। তাই ইহরাম বাঁধার পর তালবিয়া পড়তে ভুলবেন না। তালবিয়ার বাক্যটি হলো- لَبَّيْكَ ا للّهُمَّ لَبَّيْكَ – لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ – اِنَّ الْحَمدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ – لاَ شَرِيْكَ لَكَ উচ্চারণ: ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।’ অর্থ: ‘আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি (আমি হাজির), হে আল্লাহ, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি (আমি হাজির)। আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোনো শরিক নেই। আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নিয়ামত ও রাজত্ব আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই।’ (বুখারি: ১৫৪৯; মুসলিম: ২৮১১)
৬. ইহরামের পোশাক পরিধানের পর
ইহরামের পোশাক পরার পর আরেকটি দোয়া পড়া সুন্নত। দোয়াটি হলো- اَللَّهُمَّ اِنِّيْ اَسْئَلُكَ رِضَاكَ وَ الْجَنَّةَ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ غَضَبِكَ وَ النَّارِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিদাকা ওয়াল জান্নাতা ওয়া আউ’জুবিকা মিন গাদাবিকা ওয়ান্নারি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের আশা করছি এবং আপনার অসুন্তুষ্টি ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।’
৭. বিমানে (সফরের মাঝপথে) দোয়া
সফরের মাঝপথে এই দোয়া পড়ুন- أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ الله التَّامَّاتِ من شَرِّ ما خَلَقَ উচ্চারণ: ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তা-ম্মাতি মিন শাররি মা খালাক।’ অর্থ: ‘আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমার মাধ্যমে সব ধরনের অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা চাচ্ছি।’ (মুসলিম: ২৭০৮)
৮. মক্কায় পৌঁছে দোয়া
মক্কায় পৌঁছে এই দোয়া করতে পারেন- اللَّهُمَّ هَذَا حَرَمُكَ وأمْنُكَ، فَحَرِّمنِي علىٰ النارِ، وأمِّنّي مِن عَذَابِكَ يَومَ تَبْعَثُ عِبادَكَ، وَاجْعَلْنِي مِن أولِيائِك وَأهْلِ طَاعَتِكَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা হাজা হারামুকা ওয়া আমনুকা ফাহাররিমনী আলান্না-র, ওয়া আম্মিন্নী মিন আজাবিকা ইয়াওমা তাবআছু ইবাদিকা, ওয়াজআলনী মিন আওলিয়ায়িকা ওয়াহলি ত্ব-আতিকা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, এটা তোমার পবিত্র ও নিরাপদ স্থান। আমাকে তুমি জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো এবং তোমার বান্দাদের পুনরুত্থিত করার দিন আমাকে তোমার শাস্তি থেকে নিরাপদ রাখো এবং আমাকে তোমার বন্ধুদের এবং তোমার আনুগত্যকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করো।’
সম্পর্কিত সংবাদ

মুসলিম নারীর পর্দা ও পোশাক
পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান যা শালীনতা, নৈতিকতা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক। কোরআনবিস্তারিত…

এবার হজের খুতবা অনুবাদ করা হবে বাংলাসহ ২০ ভাষায়
পবিত্র হজের সময় ঘনিয়ে এসেছে। ২৯ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে এবারের হজ ফ্লাইট। সৌদি আরববিস্তারিত…