মাগরিবের পরে খোদাভীরুদের আমল

মাগরিব নামাজের পর খোদাভীরুদের একটি বিশেষ আমল রয়েছে। সেটি হলো সালাতুল আওয়াবিন বা আওয়াবিন নামাজ। আওয়াবিন শব্দটি ফার্সি। এটি ‘আওয়াব’ শব্দ থেকে নির্গত। আভিধানিক অর্থ হলো খোদাভীরু। এই অর্থ বিবেচনায় মাগরিবের ফরজ-সুন্নতের পরের এই নামাজ খোদাভীরুদের নামাজ হিসেবেও পরিচিত।

আসলেই এই নফল আমলটি মুত্তাকি তথা আল্লাহভীরুরারই বেশি আদায় করে থাকেন। সলফে সালেহিনের জীবনীতে দেখা যায়, তারা আওয়াবিন নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করতেন। বিভিন্ন হাদিসে আমরা দেখতে পাই- কোনো কোনো সাহাবি তাবেয়িদেরকেও এ সালাত আদায়ের জন্য উৎসাহ দিতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২/১৪-১৬)

সালাতুল আওয়াবিনের ফজিলত বিস্ময়কর। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ছয় রাকাত নামাজ মাগরিবের পর পড়বে, যার মাঝে আল্লাহর জিকির ছাড়া কোনো কথা বলে না, তাহলে সে ১২ বছর ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১১৯৫)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ পড়ে, যার মাঝে কোনো মন্দ কথা বলে না, তাহলে সে ১২ বছরের ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। (সুনানে তিরমিজি: ৪৩৫, ইবনে মাজাহ: ১৩৭৪)

কারো কারো মতে, এই নামাজ ফজিলতের দিক দিয়ে তাহাজ্জুদের মতোই। তাবেয়ি হাসান বসরি বলতেন, মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ের নামাজও রাতের নামাজ (বা তাহাজ্জুদ) বলে গণ্য হবে। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় ফেরেশতাগণ ওই লোকদের ঘিরে রাখেন, যারা মাগরিব ও এশার মাঝখানে নামাজ পড়ে। আর এটা হলো সালাতুল আওয়াবিন। (শরহুস সুন্নাহ লিলবাগাবি: ৮৯৭)

পবিত্র কোরআনে এই নামাজ আদায়কারীর প্রশংসা করা হয়েছে। সুরা সাজদার ১৬ নং আয়াত (তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- যে নামাজ মাগরিব ও এশার মাঝখানে পড়া হয়। সেটা হলো আওয়াবিনের নামাজ। (শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকি: ২৮৪০, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকি: ৪৮১৩)

সালাতুল আওয়াবিনের রাকাতসংখ্যা নির্ধারিত নয়। ছয় রাকাত আওয়াবিন নামাজের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। অবশ্য এর চেয়ে কমবেশিও করা যাবে। হজরত হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে মাগরিব নামাজ আদায় করলেন। ফরজ শেষে তিনি নফল পড়তে লাগলেন এশা পর্যন্ত। (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১১৯৪)

হাদিসে আওয়াবিনের নামাজ সর্বোচ্চ ২০ রাকাত পর্যন্ত পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। আওয়াবিন নামাজে বিশেষ কোনো সুরা নেই। (মাজমাউল আনহুর: ১/১৯৫, তিরমিজি: ৪৩৫, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৩/১৫৫)

নিউজটি ফেসবুকে শেয়ার করুন ...
fb-share-icon





Copy link
URL has been copied successfully!