সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট
খুলনায় মন্দিরে হামলা হয়নি, নির্যাতনের ঘটনা রাজনৈতিক

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট এর খুলনা মহানগর ও জেলার নেতারা বলেছেন, খুলনা মহানগর ও জেলায় কোনও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেনি। বেশ কিছু হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও ঘের দখলের ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেসব হামলা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ার কারণে হয়নি। প্রতিটি ঘটনাই রাজনৈতিক। হিন্দু আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে যে অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুম নির্যাতন করেছিলেন; তারই প্রতিশোধ হিসেবে বিক্ষুব্ধ জনতা এসব হামলা করেছে। একটি বিশেষ মহল হিন্দুদের রাজপথে নামিয়ে নিজেদের সংকট পার হতে চেষ্টা করছে।
সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে খুলনার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনের নেতারা।
সংগঠনের খুলনা জেলার আহ্বায়ক ডা. প্রদীপ দেবনাথের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফ্রন্টের মহানগর শাখার সদস্য সচিব প্রকৌশলী সত্যানন্দ দত্ত। এসময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক জয় বৈদ্য ও প্রিয়াঙ্কা দেবনাথ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রকৌশলী সত্যানন্দ দত্ত বলেন, দীর্ঘ সাড়ে ১৬ বছরের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর চরম নিষ্পেষিত ও বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে। যার ফলশ্রুতিতে সারাদেশেই হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের অসংখ্য ঘটনা ঘটে। ফলে দেশের নানা স্থানে পুলিশের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনাও ঘটে। সরকারের পতনের পর কার্যত সারাদেশের থানাগুলো পুলিশ শূন্য হয়ে যায়। নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগে সমাজের একটি গোষ্ঠী ডাকাতি ও লুটপাটের মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়। রাজনৈতিক মতভিন্নতা কিংবা অতীতে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ নয়, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে লুটপাট করাই যাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর খুলনা মহানগর ও জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কিছু সংঘাত, সহিংসতা, লুটপাট ও দখলের ঘটনা ঘটেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও বসতবাড়িতে হামলা লুটপাট হয়েছে। বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমাজ কর্মীরা এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাত দিন এলাকায় এলাকায়, পাড়া মহল্লায় পাহারা দিয়েছেন। তারপরও কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সব ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেখানে মুসলমান, হিন্দু বা খ্রিষ্টান বলে কোনও ভেদাভেদ নেই।
আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ফ্যাসিবাদী শাসকের পতনের পরপরই একটি গোষ্ঠী বা মহল অন্য সব সহিংস ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হচ্ছে বলে পরিকল্পিত অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, বাড়িতে লুটপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আসছে নানা মিডিয়ায়। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি গোষ্ঠী এসব সাজানো প্রতিবেদন ভাইরাল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
আমরা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার পক্ষ থেকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আপনাদেরকে জানাতে চাই, খুলনা মহানগর ও জেলায় কোনও মন্দিরে হামলার একটি ঘটনা ঘটেনি। বেশ কিছু হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও ঘের দখলের মতো ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে সে সব হামলা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ার কারণে হয়নি। এই ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে তারা অন্যদের প্রতি যে সমস্ত অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুম নির্যাতন করেছেন, তারই প্রতিশোধ হিসেবে বিক্ষুব্ধ জনতা এসব হামলা করেছে। আমরা লক্ষ্য করবেন যে, হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় কোনও এলাকায় যদি ১০ জন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন, সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হয়তো একজন। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ফ্রন্টের নেতা ব্রজেন ঢালী, সুজানা জলি, তপন কুমার ঘোষ, উজ্জ্বল কুমার সাহা, সুজিত কুমার মন্ডল, উজ্জল দাস, ইঞ্জিনিয়ার মানষ মন্ডল, রমেন রায়, অমিত মল্লিক, সত্যেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, তপন কুমার মন্ডল, দেবদাস বিশ্বাস, চন্দ্রজিৎ বৈরাগী, নিলোৎপল নিলয়, রাজু কুমার দাস, গৌড় বিশ্বাস, কৃষ্ণ বিশ্বাস, দীপ নারায়ণ, বিশ্বজিৎ গোলদার ও রতন মল্লিক প্রমুখ।
সম্পর্কিত সংবাদ

ঈমান হারানোর মহামারি নিয়ে যা বলেছেন নবীজি
ঈমান মুসলমানের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ঈমান না থাকলে নেক আমল মূল্যহীন। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ঘোষণাবিস্তারিত…

রাতে ঘুম না এলে যে দোয়া পড়তেন নবীজি
ঘুম আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে ঘুমকে আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবংবিস্তারিত…