ছোট্ট যে আমল ভুলে যাওয়া মানে জান্নাতের পথ ভুলে যাওয়া

মুমিন বলতেই জান্নাতের আকাঙ্ক্ষী। ঈমান ও নেক আমলের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ তাআলা পরকালে জান্নাত দেবেন। জান্নাত চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির আবাস। যেখানে মৃত্যু নেই, রোগ-বালাই নেই। সবরকম নেয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং যার সম্পর্কে কোনো মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পারো, ‘কেউ জানে না, তাদের জন্য তাদের চোখ শীতলকারী কী জিনিস লুকানো আছে।’ (সুরা সাজদাহ: ১৩; বুখারি: ৩২৪৪)
একজন ঈমানদার শুধুমাত্র তার ঈমানের কারণেই জান্নাতে যাবে। কিন্তু নেক আমলের অভাব ও গুনাহের কারণে শুরুতে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব হবে না। এজন্য জরুরি নেক আমলের পাল্লা ভারী করা এবং গুনাহের জন্য তাওবা-ইস্তেগফার করা। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ নিষেধ মেনে চলা ও সুন্নতের অনুসরণ করাই মূলত নেক আমল। নেক আমলের পাল্লা ভারী করতে ফরজ-ওয়াজিব আমলগুলো অবশ্যই করতে হবে। পাশাপাশি কিছু আমল রয়েছে যেগুলো হাদিস অনুযায়ী, আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম এবং জান্নাতে যাওয়ার উপায়। যেমন, নফল নামাজ, কোরআন চর্চা, অসহায় ও মজলুমকে সাহায্য করা ইত্যাদি। এর মধ্যে আরেকটি ছোট্ট আমলের বিশেষ গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। সেটি হলো দরুদ। নবীজির প্রতি দরুদ পাঠের ফজিলত বিস্ময়কর। নবীজি বলেছেন, দরুদ ভুলে যাওয়া মানে জান্নাতের পথ ভুলে যাওয়া।
ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যাক্তি আমার প্রতি দরুদ পাঠাতে ভুলে গেল সে জান্নাতের পথই ভুলে গেল। (ইবনে মাজাহ: ৯০৮)
পবিত্র কোরআনেও নবীজির প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন- ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর ওপর দরুদ পাঠান, হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরাও নবীর ওপর দরুদ পাঠাতে থাকো এবং উত্তম অভিবাদন (সালাম) পেশ করো।’ (সুরা আহজাব: ৫৬)
নবীজির প্রতি দরুদ পাঠ একদিকে আল্লাহর কাছে তাঁর রাসুলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত, বরকত ও অবারিত কল্যাণ লাভের অন্যতম উপায়। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন, তার ১০টি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং ১০টি দরজা বুলন্দ হবে।’ (নাসায়ি: ১/১৪৫; মুসনাদে আহমদ: ৩/১০২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২/৪৩) অন্য বর্ণনায়, আবু বুরদা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তার আমলনামায় ১০টি নেকি লেখা হবে। (আলমুজামুল কাবির, তাবারানি: ২২/৫১৩)
ফেরেশতারা দরুদ পাঠকারীর জন্য মাগফেরাতের দোয়া করেন। আমের ইবনে রবিয়াহ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে খুতবায় বলতে শুনেছি- ‘আমার ওপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩/৪৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪০; ইবনে মাজাহ: ৯০৭)
ইহকাল-পরকালের সকল কল্যাণ দরুদে নিহিত। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহর জিকিরের খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা। আমি বললাম, চারভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরূদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।’ (তিরমিজি: ২/৭২) মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/২৪৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪৫)
তাছাড়া কেয়ামতের দিন নবীজির সবচেয়ে নিকটবর্তী হওয়ার আমল এই দরুদ। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। (তিরমিজি: ১/১১০)
দরুদ পাঠকারীদের জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। রুওয়াইফি ইবনে সাবিত আল আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ দরুদ পাঠ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে। اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ مِنْكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আনজিলহুল মাক্বআদাল মুক্বাররাবা মিনকা ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি।’ (আলমুজামুল কাবির, তবারানি: ৫/৪৪৮১; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/২৫৪)
সকল কল্যাণের জন্য দরুদ পাঠ যথেষ্ট
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে চায় আমাদের ওপর অর্থাৎ আহলে বাইতের ওপর দরুদ পাঠের সময় তাকে পাত্র ভরে দেওয়া হোক, সে যেন এভাবে দরুদ পড়ে- اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ وَأَزْوَاجِهِ أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ وَذُرِّيَّتِهِ وَأَهْلِ بَيْتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন্নাবিয়্যি ওয়া আজওয়াজিহি উম্মাহাতিল মু’মিনীনা ওয়াজুররিয়্যাতিহি ওয়া আহলে বাইতিহি কামা সাল্লাইতা আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’ (আবু দাউদ: ১/১৪১)
সম্পর্কিত সংবাদ

ঈমান হারানোর মহামারি নিয়ে যা বলেছেন নবীজি
ঈমান মুসলমানের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ঈমান না থাকলে নেক আমল মূল্যহীন। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ঘোষণাবিস্তারিত…

রাতে ঘুম না এলে যে দোয়া পড়তেন নবীজি
ঘুম আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে ঘুমকে আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবংবিস্তারিত…